২০/০৮/২০১১
মিরপুর, ঢাকা
ঘুম ভেঙ্গে দেখি, সকাল প্রায় সাড়ে আটটা। আগমুহুর্তে দেখা স্বপ্নকে কি আলাদা করে দিবাস্বপ্ন বলা প্রয়োজন?
সে যাই হোক, দিবা হোক আর রাত হোক, স্বপ্ন, স্বপ্নই।
আমার শেষ চাকুরীস্থল, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালশ। সেখানে আমি ব্যবসা অনুষদের ডীন ছিলাম। এই প্রতিষ্ঠানের আমিই প্রথম ডীন। সেনা পরিচালিত এই সরকারী (পাবলিক) বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদের ডীন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের হওয়ার কথা, কিন্তু আমি ছিলাম একজন লেঃ কর্নেল পদবীর অফিসার। শুরুর সময়ে সেই অনুষদে, আমিই ছিলাম সবচেয়ে বয়োজেষ্ট এবং সর্বোচ্চ পদবীর অফিসার। ব্যবসা অনুষদের ডীন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পন্ন কর্নেল বা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর অফিসারের স্বল্পতার কারনে এই অনুষদে অন্য কোন উর্ধতন পদবীর অফিসার নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না। আবার, আমার যোগ্যতা ও জেষ্টতার বিবেচনায় সত্তর আমার পদোন্নতির বিষয়টিও উপেক্ষা করা যায় না। আর তাই, আমাকেই ডীন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ডীন নিয়োগের ব্যপারটিও বেশ মজার। একাডেমিক কাউন্সিল মিটিং এ মাননীয় ভিসি মহোদয় এই পদে নিয়োগ দানের জন্য আমার নাম 'ভারপ্রাপ্ত ডীন' হিসেবে উপস্থাপন করলেন। কাউন্সিল এর বুয়েটের একজন আধ্যাপক সদস্য এই প্রস্তাবনায় বিশ্ময় প্রকাশ করে বললেন, ভারপ্রাপ্ত কেন? এই দায়িত্বে যাকেই নিয়োগ দেয়া হবে সেই তো ডীন, তাহলে ভারপ্রাপ্ত শব্দ ব্যবহার করাটা কি দরকার? ওনার কি দোষ, উনি তো আর জানেন না যে, সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত বা অফিসিয়েটিং এর ব্যপারগুলি কি? এদিকে, ভিসি'রই বা কি দোষ? তিনিও তো ভাল ভাবে জানেন না, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কি প্রচলন। যা হোক, ভারপ্রাপ্ত ডীন হিসেবেই আদেশ বের হল। আর স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পুর্ব পর্যন্ত, লেঃ কর্নেল পদবীর ভারপ্রাপ্ত ডীন'ই রয়ে গেলাম।
বর্তমানে আমি নিজস্ব্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত। সেনাবাহিনীর চাকুরী নিয়ে আমার আর কোন আগ্রহ নেই বললেই চলে। নিজের কর্মক্ষেত্রের কাজকর্ম নিয়ে এবং বিভিন্ন লেখাপড়া নিয়ে বেশ ভালই আছি বলতে হয়। ২০০৯ এর ২৫শে ফেব্রিয়ারীর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথা মনে হলে মনটা খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। ব্যবসা অনুষদের ডীন হিসেবে অবলোকন করেছি এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। দেখেছি ঘৃণ্য মানসিকতা সম্পন্ন সহকর্মীদের আচরন। সব মিলে মনে হয়, সুদীর্ঘ ২৮ বছর সেনাবাহিনীর চাকুরীর অর্জন যেন ধুলোয় মিশে গেছে। মনটা এমনই বিষাদময় হয়ে উঠে যে, মনে হতে থাকে সেনাবাহিনীর সকল কর্মকান্ডই যেন নেহায়েতই প্রদর্শনী। মনে হয়, সেনাবাহিনীতে থেকেও যেন সারাটা সময় সেনা সেজে থেকেছি, সত্যিকার অর্থে কখনোই সেনা হতে পারিনি। আর তাই, পদোন্নতি পাইনি এ বিষয়ে কখনোই কোনরকমের কষ্ট অনুভব হয় না। বরং সুখানুভুতি হয় যে, পদোন্নতি পেয়ে আরো দীর্ঘদিন সেনা সেজে থাকার মত অস্বস্তিকর কাজ আমাকে করতে হয়নি।
তখনও আমি কর্মরত সেনা অফিসার। পদোন্নতির জন্য আযোগ্য বিবেচনায় আমি অতিক্রান্ত হয়েছি বেশ আগেই। অতি সত্বর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে। নিজের মান সম্মানের কথা বিবেচনা করে শেষদিন পর্যন্ত মনযোগের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এবারের পদোন্নতি পর্ষদের কার্যক্রমও শেষ হয়েছে বেশ আগেই। ক্লাশে বসে এক সহকর্মীর সাথে একটি জরুরী বিষয়ে আলোচনা করছি। এমন সময়, পিয়ন এসে একটি চিঠি দিল। খুলে দেখে আমি হতবাক। লেঃ কর্নেল থেকে সরাসরি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে আমার পদোন্নতির জন্য আদেশ বের হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহআলম এসেছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এর পিপস ও ব্যজেস সাথে নিয়ে আমাকে অভিনন্দন জানাতে। বের হয়ে এলাম সেখান থেকে। পথে দু একজনের সাথে দেখা হল। সকলের কথা বার্তায় নিশ্চিত হওয়া গেল যে এই আদেশটি মোটেও তামাশা নয়। হঠাত ঘুম ভেঙ্গে দেখি সকাল সাড়ে আটটা। মাথা ঝাকি দিয়ে দিনের কাজ শুরু করার প্রস্তুতির জন্য মনোনিবেশ করলাম।
Damns! Don't Laugh
আমার মন, মানসিকতা, ইচ্ছা ইত্যাদি সব বিবেচনায় আমার মনে হয়েছে এটা নিশ্চিত ভাবে স্বপ্নের অডাসিটি। বেহায়া স্বপ্ন যেন আমাকে নিয়ে তামাশা করেছে, আমাকে অপমানিত করেছে। এমন স্বপ্ন দেখায় আমি খুবই লজ্জিত বোধ করছি। করুণাময় আল্লাহ তা'আলা আমাদের সহায় হউন।
ফরিদ
nice picture actually ; looks like A DEAN OF DIN......
ReplyDelete