রাত তখন ১২ টা পেরিয়ে কেবল ১০ তারিখের শুরু। মোবাইল ফোন বেজে উঠল। ফোন ধরলে ওপার থেকে আওয়াজ ভেসে আসল, "Happy Birthday দুলাভাই"। আমি রসিকতা করে বললাম, কার জন্মদিন? এরকম আরো দু একটি কথা হল। ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করতেই, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ছেলে সিয়াম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। রসিকতা করে ওকেও বিভ্রান্তিতে ফেলে দিলাম। সার্টিফিকেটে আমার জন্মদিন ফেব্রুয়ারীতে। ও সন্দেহে পড়ে গেল। তখনই সন্দেহ দূর করার প্রয়াসে আমার কাছে মোবাইল নিয়ে ফোন করল।
দিদু, আজ বাবার জন্মদিন না? সম্ভবতঃ ওপাড় থেকে জবাব এল, আমার তো ভাল ভাবে মনে নেই ভাইয়া। যাহোক, সন্দেহ থেকেই গেল। ওদিকে আমার মার তো বেহাল অবস্থা। আমার ছেলের জন্মদিন আমার মনে নেই! আমি "রত্নগর্ভা মা" সম্মাননা পদকে ভুষিত। তা কি করে হয়? একি লজ্জা!
মরিয়া হয়ে খোজা শুরু হয়ে গেল বাবার রেখে যাওয়া ডায়েরী। সেখান থেকে তথ্য পেতে প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে গেল, আর তাই আনুমানিক রাত ১ টায় আবার ফোন বেজে উঠল, দাদী তার নাতীকে জানাতে চায়, তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে আজই সেই জন্মদিন।
মজার বিষয়, মা তার ছেলের জন্মদিনের কথা খেয়াল রাখতে পারেনি। বার্ধ্যক্যতাই হয়তো তার মুল কারন। ভাইয়েরাও খেয়াল রাখেনি, হয়তো ব্যাস্ততাই তার কারন। কিন্তু শালারা খেয়াল রেখেছে। ১০ তারিখ সারাটাদিন শালা, শালার বৌ প্রায় সকলেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানাল। আর এদিকে শুরু হয়ে গেল ইন্টারনেট গ্রুপ মেইলে কোর্সমেটদের শুভেচ্ছা ও ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা ।
শালা বাবু দিনের শেষভাগে ফোন করল ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানানোর জন্য। বকা খেয়েও বলল, জন্মদিনের কেক এর ভাগ তো পাঠালেন না। উত্তরে বললাম, কৈ, কোন উপহার তো পৌছালো না। ছেলেমেয়েরা বলল, বাবা আজ খাওয়াতে নিয়ে যাবে না? আমি বললাম, কে কাকে খাওয়াতে নয়ে যাবে আজকে? ছেলেমেয়ারা বলল, আমরাই খাওয়াবো।
এভাবেই, হালকা হালকা কিছু মজার মধ্য দিয়ে দিনটি বেশ কাটল। আজকাল, এইসব শুভেচ্ছা বিনিময়, ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানানো কত সহজ হয়ে গেছে। শুভেচ্ছা বা শুভ কামনা পাওয়া এখন যেন দৈনন্দিন প্রতিটি মুহুর্তে নেয়া শ্বাসপ্রশ্বাসের মত হয়ে গেছে। অতীব প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের শরীরে প্রবেশ বা নির্গমন যেমন হৃদয়কে আন্দোলিত করে না, তেমনি যেন হয়ে গেছে ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনার বর্তমান অবস্থা।
অথচ, অদুর অতীতে, একটি চিঠি, একটি কার্ড বা শ্বশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জানানো ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা যেন সত্যই হৃদয়কে আন্দোলিত করত। সুন্দর একটি অনুভুতি যেন হৃদয়পটে উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার মত দীর্ঘসময় ধরে বিরাজ করত। সেটা যেন ছিল একটা অন্য ধরনের ব্যাপার। সেটা যেন ছিল একটি সুন্দর সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য চালিকা শক্তি। মনে হয়, কালের প্রবাহে ধীরে ধীরে আমরা যেন আমিত্ব থেকে দূরে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি। আন্তরিকতা যেন ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
অতীতে কখনো এ বিষয়ে মনে কোন প্রশ্ন আসেনি, কারনটা হয়তো সেনাবাহিনীর ব্যাস্ততা। আর তাই জন্মদিনে কুশলাদি বিনিময়, শুভেচ্ছা জানানো বা ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা সবসময়েই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এবারে যেন তার ব্যাতিক্রম হল। এবারে, মনে অনেক প্রশ্ন।
একটি প্রশ্ন, আজকের এই কুশলাদি বিনিময় বা ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা, আর সেই অতীতের সেই শুভ কামনার প্রভাব কেন এমন আলাদা মনে হয়?
funny
ReplyDeleteWhat is this? Why do you sa funny?
ReplyDelete